মানবদেহের রক্ত কথা: মানবদেহের পরিণত লােহিত রক্ত কণিকা দ্বি-অবতল, চাকতি আকৃতির এবং নিউক্লিয়াস বিহীন। এতে হিমােগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে লাল বর্ণের হয়। এজন্য এদের Red Blood Cell বা RBC বলে। লােহিত কণিকা প্রকৃতপক্ষে হিমােগ্লোবিন ভর্তি ভাসমান ব্যাগ এবং চ্যাপ্টা আকৃতির। এ কারণে লােহিত কণিকা তার আকারের পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। লােহিত কণিকাগুলাের বিভাজন হয় না। এ কণিকাগুলাে সার্বক্ষণিক অস্থিমজ্জার ভেতরে উৎপন্ন হয় এবং রক্তরসে চলে আসে।
মানুষের লােহিত কণিকার আয়ু প্রায় চার মাস অর্থাৎ ১২০ দিন। অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে লােহিত কণিকা প্লিহা-তে সঞ্চিত
থাকে। তাৎক্ষণিক প্রয়ােজনে এখান থেকে লােহিত কণিকা রক্তরসে সরবরাহ হয়। আমাদের জীবনের প্রতি মুহুর্তে লােহিত
রক্তকণিকা ধ্বংস হয় আবার সমপরিমাণ তৈরি হয়। মােটামুটি গড় হিসেবে বিভিন্ন বয়সের মানব দেহে প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে
লােহিত কণিকার সংখ্যা হচ্ছে: ভূণ দেহে: ৮০-৯০ লাখ, শিশুর দেহে: ৬০-৭০ লাখ, পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ দেহে: ৪.৫ – ৫.৫ লাখ এবং
পূর্ণ বয়স্ক নারীর দেহে: ৪ – ৫ লাখ।
প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
• নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বহন করা।
• রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখা। শ্বেত রক্তকণিকা শ্বেত কণিকার নির্দিষ্ট কোনাে আকার নেই।
এগুলাে হিমােগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ।
শ্বেত কণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন। হিমােগ্লোবিন না থাকার কারণে এদের শ্বেত রক্তকণিকা বলে।
ইংরেজিতে White Blood Cell বা WBC বলে। রক্তে এদের সংখ্যা RBC-এর তুলনায় অনেক কম।
এরা অ্যামিবার মতাে দেহের আকারের পরিবর্তন করে। ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণুকে ধ্বংস করে। রক্ত জালিকার প্রাচীর
ভেদ করে টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। শ্বেত কণিকাগুলাে রক্তরসের মধ্য দিয়ে নিজেরাই চলতে পারে।
দেহ বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, দ্রুত শ্বেত কণিকার সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে।
মানবদেহের রক্ত কথা
মানবদেহে প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে ৪-১০ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। শিশু ও অসুস্থ মানবদেহে এর সংখ্যা বেড়ে যায়।
প্রকারভেদ গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুসারে শ্বেত কণিকাকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
(ক) অ্যাগ্রানুলােসাইট বা দানাবিহীন এবং
(খ) গ্রানুলােসাইট বা দানাযুক্ত।
(ক) অ্যাগ্রানুলােসাইট: এ ধরনের শ্বেত কণিকাগুলাের সাইটোপ্লাজম দানাহীন ও স্বচ্ছ। অ্যাগ্রানুলােসাইট শ্বেত কণিকা দুই রকমের।
যথা- লিম্ফোসাইট ও মনােসাইট। দেহের লিম্ফনােড, টনসিল, প্লিহা, ইত্যাদি অংশে এরা তৈরি হয়। লিস্ফোসাইটগুলাে ছােট
কণিকা। মনােসাইট বড় কণিকা। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রােগ জীবাণুকে
ধ্বংস করে। এভাবে দেহে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মনােসাইট ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রােগ জীবাণুকে ধ্বংস করে।
খ) গ্রানুলােসাইট: এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত। গ্রানুলােসাইট শ্বেত কণিকাগুলাে নিউক্লিয়াসের আকৃতির ভিত্তিতে তিন
প্রকার। যথা- (১) নিউট্রোফিল (২) ইওসিনােফিল ও (৩) বেসােফিল।
নিউট্রোফিল ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে। ইওসিনােফিল ও বেসােফিল হিস্টাসিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরােধ করে।
বেসােফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্ত বাহিকার ভেতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয় না।
অণুচক্রিকা ইংরেজিতে এদেরকে প্লাটিলেট (Platelet) বলে।
অণুচিক্রকা আকারে ছােট, বর্তুলাকার ও বর্ণহীন। এরা গুচ্ছাক অস্থিমজ্জার মধ্যে অণুচক্রিকা উৎপন্ন হয়। অণুচক্রিকাগুলাের গড়
আয়ু ৫-১০ দিন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘন রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।
অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
কোন রক্তবাহী নালির এরা অনতিবিলম্বে থ্রোম্বােপ্লাষ্টিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য নিঃসরণ করে। যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য ক
রক্ত উপাদানের অস্বাভাবিক অবস্থা মানুষের রক্তের বিভিন্ন উপাদানের তারতম্য ঘটলে যে অবস্থার সষ্টি হয়, তাকে রক্তের
অস্বাভাবিক অবস্থা বলা হয়। যেমন
